বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে তাঁর ঘরে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন নির্যাতনের শিকার নারী।
গতকাল মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন ওই নারী।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ চৌধুরী মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, দেলোয়ার হোসেনকে এখন এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। মামলার অপর আসামি আবুল কালামকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন, গত ২ সেপ্টেম্বর দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার আগে দেলোয়ার দুবার তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন। এর মধ্যে একবার ধর্ষণ করা হয় প্রায় এক বছর আগে। আর দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করা হয় রমজানের কিছুদিন আগে। দ্বিতীয়বার ধর্ষণের ঘটনার দিন দেলোয়ারের সহযোগী কালামও তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
গতকাল দুপুরে জেলা মানবাধিকার কমিশনের দুই সদস্যের প্রতিনিধি জেলা শহরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা আল মাহমুদ ফজলুল কবির। তিনি বলেছেন, নিরাপত্তাহীনতায় ও ভয়ের কারণে ঘটনার মূলহোতা দেলোয়ারের নাম প্রকাশ করেননি ওই গৃহবধূ।
কমিশনের সদস্যরা জানান, দেলোয়ার তাঁকে ইতিপূর্বে আরো কয়েকবার ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন এবং ঘটনা প্রকাশ করলে তাঁদের কাছে থাকা ভিডিওগুলো ইন্টারনেটে প্রকাশ করে দেবেন বলে হুমকি দেন। ফজলুল কবির বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করব।’ তিনি বলেন, নির্যাতিতা তাঁকে জানিয়েছেন, এক বছর আগে দেলোয়ার তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। এ ছাড়া তাঁর বাহিনী ভয় দেখিয়ে একবার তাঁকে নৌকায় নিয়ে ধর্ষণ করেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বিয়ে হয়। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। স্থানীয় দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার রহিম, বাদল, কালামসহ অন্য সহযোগীদের নিয়ে গৃহবধূর বাড়িতে যান। সেখানে তাঁরা স্বামীসহ ওই গৃহবধূ অনৈতিক কাজ করেছেন বলে অভিযোগ এনে নির্যাতন চালান। গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন তারা। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ নিজের সম্ভ্রম রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন; কিন্তু নির্যাতনকারী কয়েকজন যুবক তাঁর পোশাক কেড়ে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলতে থাকে। এ সময় তিনি হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন এবং তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু এক যুবক কয়েকবার তাঁর মুখমণ্ডলে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেন। তাঁর শরীরে একটা লাঠি দিয়ে আঘাতও করতে থাকেন। তাঁর নগ্ন ছবি ধারণের চেষ্টা চালান তাঁরা। একজন হাত উঁচিয়ে তাঁকে উৎসাহ দেন। আরেকজন তাঁর শরীরের অবশিষ্ট পোশাক টেনে নেন। এ সময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবেন বলে চিৎকার করেন একজন।
ঘটনাটি নজরে এলে গত রবিবার (৪ অক্টোবর) অভিযান চালিয়ে দুইজনকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতেই থানায় পর্নোগ্রাফি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার নারী।